চট্টগ্রাম নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ড পূর্ব বাকলিয়ার আব্দুল লতিফ হাট হাজী চাঁদ গাজী জামে মসজিদে আজকের পবিত্র জুমার নামাজে খতিব হিসেবে ওয়াজ পেশ করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মুফতি তারেক আবেদিন কাদেরী।
তিনি কুরআন-হাদিসের আলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করে মুসল্লিদের অন্তরে ঈমানের জ্যোতি প্রজ্বলিত করেন।
আলোচনার মূল বিষয়সমূহ
🔹 হুরুফে মুকাত্তা‘আত ও আয়াতে মুতাশাবিহাত
খতিব বলেন, কুরআনের শুরুতে যে আলিফ-লাম-মীম, তোয়া-হা ইত্যাদি হরফ এসেছে, এগুলোর প্রকৃত অর্থ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ছাড়া কেউ জানে না। এগুলোকে আয়াতে মুতাশাবিহাত বলা হয়। পাঠ করলে সওয়াব পাওয়া যায়, তবে এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য মানুষের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে।
🔹 কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব
তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাব পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কুরআন মানবজাতির জন্য হিদায়াত, রহমত ও নূরের উৎস।
🔹 "লা উকসিমু বিহাজাল বালাদ" এর তাফসির
আল্লাহ মক্কা নগরীর শানে শপথ করেছেন। এর মাধ্যমে মক্কার মর্যাদা ও নবী করিম ﷺ এর মহান সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
🔹 সূরা কাহাফ, আয়াত ১১০
এই আয়াতকে তিনি আয়াতে মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভুক্ত উল্লেখ করেন এবং বলেন—এটি দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং কুরআনের অন্যান্য আয়াতের আলোকে বুঝতে হবে।
🔹 "আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ"
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন—আল্লাহ আসমান-জমিনের নূর। এর গভীর অর্থ মানুষের সীমিত জ্ঞান দ্বারা পুরোপুরি অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
🔹 নবীজি ﷺ এর মর্যাদা
তিনি বলেন, নবীজি ﷺ কে শুধু সাধারণ "বাশার" বলা যাবে না। নবীজির তিন সূরত রয়েছে—
১. বশরি সূরত (মানবীয় রূপ)
২. মালাকি সূরত (ফেরেশতার রূপ)
৩. হক্বি সূরত (নূরের হক্বিকী রূপ)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘাম মুবারক মেশক-আম্বরের চেয়েও সুগন্ধি ও মূল্যবান।
🔹 জিবরাইল আঃ ও সিদরাতুল মুনতাহা
জিবরাইল আঃ কখনো মানব রূপে নবীজির দরবারে আসতেন। আর মেরাজের রাতে সিদরাতুল মুনতাহায় নবীজি ﷺ এর সাথে তাঁর বিশেষ আলোচনা হয়েছিল।
🔹 হযরত ইবরাহিম আঃ ও নমরুদ
ইবরাহিম আঃ মৃতকে জীবিত করার প্রমাণ উপস্থাপন করেন এবং সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে, তুমি পশ্চিম দিক থেকে ওঠাও—এই যুক্তিতে নমরুদকে পরাজিত করেন। অবশেষে নমরুদ পালিয়ে যায়।
🔹 সূর্যের ফিরে আসা
রাসূল ﷺ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর অনুরোধে সূর্যকে পুনরায় উদিত হওয়ার নির্দেশ দেন। সূর্য নবীর হুকুমে পশ্চিম থেকে উদিত হয়, যা রাসূলের মু‘জিজার অন্যতম নিদর্শন।
🔹 সওমে বিসাল
তিনি নবীজির নিরবচ্ছিন্ন রোজা (সওমে বিসাল) প্রসঙ্গে “আইয়্যুকুম মিসলি” হাদিসের ব্যাখ্যা দেন।
🔹 আয়াতে মুহকামা
সুরা মায়িদাহর রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, মুহকাম আয়াতগুলো দ্বীনের দলিল ও মূলনীতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
দুনিয়ার অস্থায়ী জীবন
মুফতি তারেক আবেদিন কাদেরী বলেন—দুনিয়া স্থায়ী নয়। একবার মৃত্যু হলে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ নেই। তাই আমাদের উচিত কুরআন-হাদিসের আলোকে জীবন গড়ে তোলা।
উপসংহার
মুফতি তারেক আবেদিন কাদেরীর জুমার খুতবা ছিল অন্তরস্পর্শী ও জ্ঞানগর্ভ। মুসল্লিরা একাগ্রচিত্তে ওয়াজ শুনেন এবং নামাজ শেষে দোয়া করেন।